অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে বড় ভূমিকা রাখেন প্রবাসীরা। সামগ্রিক অর্থনীতির একটি বড় অংশ আসে তাদের আয় থেকে। বিশেষ করে শ্রমজীবী প্রবাসীরা তাদের শ্রমশক্তির সক্ষমতায় বিদেশে যে অর্থ আয় করেন তার বহুলাংশ দেশে পাঠিয়ে দেন। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের ১৭৪টি দেশে এক কোটি ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। যাদের বেশির ভাগই সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ।

৭৫% শ্রমিক রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। করোনাকালে ইউরোপ-আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে মারা গেছেন এক হাজারেরও বেশি শ্রমিক। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার করোনার দুঃসময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নগদ আর্থিক প্রণোদনা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে। সেভাবে প্রবাসীদের প্রণোদনা না দেয়ার ইতিবৃত্তও উঠে আসে। তবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক শ্রম সংস্থা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে কয়েকশ কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল গঠন করে প্রবাসীদের।

যারা বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসবে তাদের কর্মসংস্থানের জন্য সরকার সর্বোচ্চ ৪% সুদে ঋণ দিচ্ছে। তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে কোনো জামানতের প্রয়োজন হবে না। অর্থাৎ, অর্থনীতির এই মূল্যবান খাতটিতে সরকার বিশেষ নজরদারি করছে। আর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তদারকি করবে যাতে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি ঢুকতে না পারে। বিদেশফেরত শ্রমজীবীদের আত্মনির্ভরশীল হতে সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ানো হবে।

প্রধানমন্ত্রী আবারো প্রবাসী বাংলাদেশিদের যথাযথ সেবা দিতে লন্ডন দূতাবাসের কূটনীতিকদের আবেদন জানিয়েছেন। জলবায়ু সম্মেলনে বিদেশ সফররত প্রধানমন্ত্রী লন্ডন হাইকমিশনে বঙ্গবন্ধু লাউঞ্জ উদ্বোধন করেন সমপ্রতি। সেখানে বিদেশে বাংলাদেশি কূটনীতিকদের আন্তরিকতার সঙ্গে প্রবাসীদের সাহায্য-সহযোগিতার আহ্বান জানান। সেবা ছাড়াও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে আন্তর্জাতিক বিশ্বে প্রবাসীদের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখাও বিশেষ দায়িত্ব।

এ ক্ষেত্রে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করতে প্রাসঙ্গিক উদ্যোগ নেয়াও জরুরি। ঐতিহ্যিক বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরাও একপ্রকার নৈতিক দায়িত্ব। আর প্রবাসী বাঙালিরাও যাতে নিজেদের সুরক্ষিত রেখে তাদের পেশার দায়বদ্ধতাকে এগিয়ে নিতে পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই গ্রহণ করা একান্ত আবশ্যক। প্রবাসীরা যখন নিজ দেশে আসেন, সে সময় অনেক সমস্যাও তাদের বিব্রত করে। বিমান বন্দরে হয়রানি থেকে শুরু করে হরেক জটিলতায় তাদের যাত্রাপথ সেভাবে নির্বিঘ্ন হয় না।

অথচ তাদের আয়ের একটা বড় অংশ দেশে রেমিট্যান্স হিসেবে আসে। করোনা দুর্ভোগে প্রবাসীরাও কম বিপাকে পড়েননি। করোনা পরীক্ষা থেকে শুরু করে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন পালন করা স্বাস্থ্যবিধি। কিন্তু সেখানেও প্রবাসীরা নিরাপদ কিংবা আশঙ্কাহীন অবস্থায় দিন যাপনে ব্যর্থ হয়েছেন। করোনা টিকার সনদপত্র পেতেও অনেক সময় তাদের দুর্ভোগের চিত্র উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ অর্থ লেনদেনের জায়গায় প্রবাসীদের হয়রানি কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এখন আর রেমিট্যান্স পাঠাতে নির্দিষ্ট সময় লাগে না। দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় যে কোনো সময় এই রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীদের জন্য এক কল্যাণমূলক কর্মসেবা। ছুটির দিনেও টাকা পাঠাতে পারছেন এখন প্রবাসীরা। দেয়া হচ্ছে নগদ ২ শতাংশ প্রণোদনা।

এর ফলে সর্বাধিক উপকৃত হচ্ছেন প্রবাসে থাকা অসংখ্য বাংলাদেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার মজুদ প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রমের রেকর্ড হয়েছে। অবশ্য আইএমএফের কিছু অনুদানও এখানে সম্পৃক্ত। সরকার প্রবাসীদের সর্বক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোসহ দেশীয় সেবা-পরিষেবা খাত আরও উন্নত করবে এটাই কাম্য।